আধাসামরিক বাহিনীর পরীক্ষায় সফল নিগমানন্দ মর্নিং ইউনিটের ৯ তরুণ, উচ্ছ্বাস এলাকায়
Friday : উত্তরের হাওয়া, ২০ ডিসেম্বর: এদের কারোর সংসার চলে কৃষিকাজে, কারোরবা দিনমজুরি। প্রায় সকলেরই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অর্থবলের অভাবও নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এত কিছুর পরও এদের কারোরই স্বপ্নের অভাব ছিলনা। শুধু দুচোখ ভরা স্বপ্ন ও কঠোর পরিশ্রমে ভর করে সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের জেনারেল ডিউটি কনস্টেবল পদের চুড়ান্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার নিগমনগর ও সংলগ্ন এলাকার ৯ যুবক। খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবেন এই তরতাজা তরুনেরা। ফল প্রকাশিত হবার পরই দীর্ঘদিনের কষ্ট দুর হওয়ার আনন্দে আবেগে ভাসছেন সুবির মোদক, রফিক হোসেন, বিভজিৎ প্রধান, তনয় বর্মন, প্রতীক পাল, হিল্লোল হোসেন, সুমন সিং, শিবসাগর রায়, রুপঙ্কর মহন্ত রা। তাদের ঘিরে উচ্ছাসের অন্ত নেই তাদের পরিবারেরও। একসাথে ৯ তরতাজা তরুণের সামরিক বাহিনীতে চাকরি পাওয়ার খবর ছড়াতেই খুশির ছোয়া এলাকাতেও।
সফল ৯ তরুণই নিগমনগর ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এবং পরস্পরের বন্ধু। শুধু তাই নয় এদের সকলেই এক সুতোয় বেধেছে স্থানীয় নিগমনগর নিগমানন্দ মর্নিং ইউনিট। কাদের নিয়ে তৈরী এই ইউনিট? কীভাবে কাজ করে এই সংগঠন? কীভাবে এর সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জুড়ে যান এলাকার স্বাবলম্বনের স্বপ্নে বিভোর তরুন তরুনীরা? একসাথে এতজনের অভূতপূর্ব সাফল্যই বা এল কী করে? সোমবার সাত সকালে নিগমনগর নিগমানন্দ সারস্বত বিদ্যালয়ের মাঠে বসেই শোনালেন নিগমনগর নিগমানন্দ মর্নিং ইউনিটের প্রধান উপদেষ্টা তথা পেশায় স্থানীয় গ্রামীন পুলিশ কৃষ্ণ ভৌমিক। তাঁর কথায়, “বছর কয়েক আগেই প্রতিদিন ভোরে নিগমনগর হাইস্কুলের মাঠে শরীর চর্চা করতে আসা তরুন তরুনীদের একজোট করেই শুরু হয় মর্নিং ইউনিটের পথচলা। প্রতিদিন নিয়ম করে শরীর চর্চার পাশাপাশি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নিজেরাই প্রস্তুতি চালায় এই সংগঠনের সদস্যরা। পরস্পরকে সাহায্য করার পাশাপাশি একে অপরের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতেও এরা একে অন্যের পরিপূরক।” তাঁর সংযোজন, “প্রথম কয়েক বছর বিশেষ সাফল্য না মিললেও, গত তিন-চার বছরে পুলিশ সহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে সাফল্য পেয়েছে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত অনেক ছেলে মেয়েরা। তবে একবারে ৯ জনের সাফল্য আমাদের তৃপ্তি দিচ্ছে। এই সাফল্যে এলাকার বহু কিশোরকিশোরী নতুন উদ্যমে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পড়বে বলেই আশাবাদী।”
দিনহাটা মহকুমার নিগমনগর, ছোট আটিয়াবাড়ি, বড়শাকদল, কিশামতদশগ্রাম সহ বিস্তির্ন এলাকার অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। স্বভাবতই বহু পরিবারে অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী। এমন পরিস্থিতিতে খুব কম বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বিপথে পা বাড়ানোর ঘটনা হামেশাই ঘটত। এমন পরিস্হিতিতে এই সংগঠনের স্থানীয় কিশোরকিশোরী ও তরুন তরুণীদের মধ্যে খেলাধুলা ও শরীর চর্চার প্রসারই নয়, সামাজিক কাজেও এগিয়ে আসে প্রায়শই। সংগঠনের সভাপতি শিশির বর্মন, সহসভাপতি, মেঘনাদ রায়, সদস্য বিপুল বর্মন, পঙ্কজ বর্মন, প্রণয় রায়রা একসুরে জানালেন, “খেলাধুলা, শরীরচর্চা, নিয়মানুবর্তিতা তো বটেই, পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগী মর্নিং ইউনিট। আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত সদস্যরা সফল হচ্ছে এটা আনন্দের। ওদের দেখে অনুপ্রাণিত হবে ছোটরাও।” এদিকে আবেগের মাঝেও মর্নিং ইউনিটকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি সদ্য সফল তরুনরাও। ভবিষ্যতেও সর্বতোভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে তারা।