গরমে কৃষি শ্রমিকের আকাল দিনহাটা জুড়ে
Saturday : উত্তরের হাওয়া, দিনহাটা, ১৮মে: “প্রচন্ড গরমে জমিতে কাজই করতে চাইছে না কোন শ্রমিক। বাধ্য হয়ে নিজেকেই পাট খেতে নিড়ানি দিতে হচ্ছে। কিন্তু একা আর কত পারা যায়?” - নিজের পাটখেতের পাশের গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিতে নিতেই ক্লান্ত গলায় জানালেন দিনহাটা ২ ব্লকের শুকারুরকুঠি এলাকার চাষি রথীন্দ্র বর্মন। শুধুমাত্র রথীন্দ্র বাবু নন, কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার বিস্তির্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বললেই ধরা পড়বে তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট ও তা নিয়ে কৃষকদের চুড়ান্ত বিড়ম্বনার বর্তমান ছবি। কৃষকরা জানালেন, গত এক মাসে দিনহাটা মহকুমা জুড়ে বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই উষ্ণতার পারদ চড়ছে পাল্লা দিয়ে। এরফলে ধান, পাট ও ভুট্টা খেতে জলসেচ করতে হচ্ছে নিয়মিত। পাশাপাশি পাট ও ধান খেতে নিড়ানি দেওয়া ও ভুট্টার পরিচর্যায় গুরুত্ব বেশী দিতে হচ্ছে। যার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে প্রচুর পরিমানে কৃষিশ্রমিকের। অথচ তীব্র গরমে কৃষি খেতে কাজ করতে চাইছেন না অনেকে। এমনকি সুযোগ বুঝে কয়েক গুন বেশি পারিশ্রমিকও দাবী করছেন একাংশ। এমন পরিস্হিতিতে তীব্র গরমে বেকায়দায় পড়েছেন স্হানীয় কৃষকরা। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা বেশি পারিশ্রমিকেই কাজ করাচ্ছেন। যারা পারছেন না, তাঁদের অনেকেরই ফসল পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। সমস্যার কথা মেনে দিনহাটা ২ ব্লক সহকৃষিঅধিকর্তা শুভাশীষ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ধান, পাটের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। তাঁর সংযোজন, এলাকার কৃষিকাজের অনেকটাই মনুষ্যশ্রম নির্ভর। তবে উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে সারাবছরই উদ্যোগ নেওয়া হয়। কৃষকরা তা দুহাতে গ্রহনও করছেন। এভাবেই ক্রমশ ভরা মরশুমে শ্রমিক সমস্যা মেটানো যাবে বলে আশাবাদী।
দিনহাটা ১, দিনহাটা ২, সিতাই ও দিনহাটা পুরসভা নিয়ে গঠিত সুবিশাল দিনহাটা মহকুমা। প্রত্যন্ত এই মহকুমার অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। সারাবছর মুলত ধান, পাট, ভুট্টা, তামাক উৎপাদন করেই জীবিকা নির্বাহ করেন অধিকাংশ কৃষক। যাদের জমি নেই তাদের একটা বড় অংশ কৃষিশ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু সারা বছর কাজের অভাব, যথোপযুক্ত পারিশ্রমিকের অভাব ও কৃষিকাজের প্রবল খাটুনি সহ নানা কারনে থাকায় জমিহীন অনেক শ্রমিকই ভিনরাজ্যে কাজে যান। এরফলে কৃষিকাজের মরশুমেও অনেকসময়ই শ্রমিকের অভাবে ভুগতে হয় কৃষকদের। চলতি মরশুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টি ও অত্যধিক গরম শ্রমিক সংকটের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে। তীব্র গরমে কাজ করতে চাইছেন না অনেকেই। দিনহাটা ২ ব্লকের কিশামতদশগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েতের গোবড়াছড়া দশগ্রামের চাষি নিত্যানন্দ বর্মনের কথায়, বাড়িতে একা মানুষ প্রায় ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অনাবৃষ্টি ও গরমে ঘনঘন জলসেচ করতে হচ্ছে। আগাছা বেশি হচ্ছে বলে নিড়ানিও দিতে হচ্ছে। সহজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। ফসলের ক্ষতির কথা ভেবে বেশি টাকা খরচা করতে হচ্ছে। মরশুম শেষে লাভ কতটা হবে, তা নিশ্চিত নই। কদমতলা এলাকার জগদীশ দাসের কথায়, দু বিঘা জমিতে পাট করেছি। যেটুকু পারছি নিজে করছি। একা একা জলসেচ ও নিড়ানি দিয়ে উঠতে পারিনি। কিছু অংশের পাট শুকিয়েও গেছে। বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে শ্রমিক নেওয়ার সামর্থ্য নেই। দিনহাটা ভিলেজ ২ এলাকার চাষি প্রদীপ সিং এর কথায়, বর্তমানে কৃষকদের দম ফেলবার সময় নেই। তীব্র এই গরমে পাট ও ভুট্টার পরিচর্যা তো বটেই, অনেকের ধানও পাকতে শুরু করেছে। এই অবস্হায় শ্রমিকদের কাজ করতে না চাওয়ায় সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। এমনকি ব্যয়ও বাড়ছে। যদিও মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি শ্রমিকদের সাথে এবিষয়ে কথা বলতেই নাম না দেওয়ার শর্তে তাদের সাফাই, এই গরমে ছায়ায় ও ঠান্ডা ঘরে থাকতেই হাঁসফাস করছেন মানুষ। এই অবস্হায় কড়া রোদে জমিতে কাজ করতে গিয়ে অসুস্হ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই যাদের অন্য উপায় আছে তারা কাজ করছেন না। যারা নিরুপায় তারাও বিপদের কথা ভেবেই বেশি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।
2024-05-18